ব্যবসা বাণিজ্য

সংস্কার না হলে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামবে

  • ২০৩৬-৪১ সালের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন
    সংস্কার না হলে প্রবৃদ্ধি ৫%

  • মোটামুটি সংস্কারে ৫.৯%

  • ভালো সংস্কার হলে ৭.৫%

সংস্কার লাগবে যেখানে

  • ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা; আর্থিক খাত এবং নগরায়ণ

    সংস্কার না হলে ২০৩৬ সাল নাগাদ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে যাবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। আর মোটামুটি ধরনের সংস্কার হলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভালো সংস্কার হলে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। একই সঙ্গে সংস্কার না হলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গতিও কমে যাবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

    বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘চেঞ্জ অব ফ্যাব্রিক’ প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনটির নানা দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ নোরা ডিহেল ও মুখ্য অর্থনীতিবিদের পরামর্শক জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

    বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘চেঞ্জ অব ফ্যাব্রিক’ প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়

    বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা; আর্থিক খাত এবং নগরায়ণ—এই তিন খাতে সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বর্তমান ধারাবাহিকতায় চলতে (সংস্কারহীন) থাকলে ক্রমান্বয়ে প্রবৃদ্ধি কমবে। ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। পরের পাঁচ বছরে তা কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হবে। ২০৩৬-৪১ সময়ে তা আরও কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে। একইভাবে মোটামুটি ধরনের সংস্কার হলে প্রবৃদ্ধি কমার গতি কিছুটা কম হবে। তখন প্রতি পাঁচ বছরে দশমিক ৩ শতাংশ হারে কমে ২০৩৬-৪১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ নেমে আসবে। আর ভালো সংস্কার হলে ২০৩৬-৪১ সাল নাগাদ সাড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ভালো সংস্কার হলেও বাংলাদেশের ২০৪১ সাল নাগাদ যে উন্নয়ন লক্ষ্য আছে, এর চেয়ে পিছিয়ে থাকবে।

    এবার দেখা যাক, কী ধরনের সংস্কারের কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করতে শুল্ক-কর কমানো, বাণিজ্য সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ও বহুজাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আর্থিক খাতের সংস্কারের মধ্যে আছে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও শেয়ারবাজার শক্তিশালী করা, অবকাঠামো নির্মাণ ঋণসহায়তা দেওয়া, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার সম্প্রসারণ, খেলাপি ঋণ কমানো, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং আর্থিক খাতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কমানো। অন্যদিকে উন্নত জীবন ও আধুনিক নগরায়ণে পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন, নাগরিকদের ডিজিটাল সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, নগরায়ণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যানজট নিরসন, ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ইত্যাদি।

    ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং উন্নত নগরায়ণের অভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির গতিও কমে যেতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, মোটামুটি মানের সংস্কার হলে ২০৪১ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় আরও ২ হাজার ২৫৮ ডলার বাড়বে। আর শক্তিশালী ও কার্যকর সংস্কার হলে ওই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় আরও ৬ হাজার ৬৬৮ ডলার বাড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮২৪ ডলার।

    পরিকল্পনামন্ত্রীর জবাব

    আলোচনা সভার শেষ অংশে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী বক্তব্য দেন। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন খাতে সমস্যা আছে। নানা কারণে এই খাতগুলোতে বহু ব্যর্থতা আছে। এসব খাতে সংস্কার করতে হবে। অবশ্যই আমরা ভালো সংস্কার করব। জনগণ সংস্কার চায়। পুরো সংস্কার না পারলেও কিছুটা করতে পারব। এ বিষয়ে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’

    সংস্কারের সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘জোর কদমে হাঁটতে পারব না। তবে সামনে এগিয়ে যাব। আপনারা যত জোর কদমে চান, ততটা জোর কদমে হয়তো হাঁটতে পারব না।’

    ঢাকায় জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ

    বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহত্তর ঢাকা থেকে দেশের জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ আসে। আর দেশের মোট আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রায় অর্ধেক হয় ঢাকায়। রাজধানী ঢাকার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে শুল্কহার ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দ্বিগুণ। এতে পণ্য আমদানির খরচ বাড়ে।

    আলোচনা

    অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বর্তমান ডলার–সংকটে তৃতীয় মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এ ছাড়া নানাভাবে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এটি যৌক্তিক করা উচিত। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতিধারা তুলে ধরেন।

    সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমানে সরকার রাজস্ব আয়ের জন্য মরিয়া। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক রাজস্ব আদায়নীতি হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চ্যান। তিনি বলেন, গত এক দশকে বিশ্বের দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০ দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। তবে এ অর্জনে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

    প্রসঙ্গ রাজনীতি

    পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আশা করি ঝড় আসবে না। রাজনীতিবিদদের আলোচনার পথে আসতে হবে। সভ্যতা-ভব্যতার পথে আসতে হবে।’ তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি এই আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘লাঠিসোঁটা দিয়ে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না।’

এছাড়াও পড়ুন  ইয়েমেনে হুথি হামলার পর ক্রুরা যুক্তরাজ্য-নিবন্ধিত পণ্যবাহী জাহাজ পরিত্যাগ করেছে

Related Articles

Back to top button